হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া নিউজ ডটকম
প্রকাশিত: ১৯/১১/২০২৩ ৪:৩৪ পিএম , আপডেট: ১৯/১১/২০২৩ ৫:২৩ পিএম
উখিয়া-টেকনাফ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা জাফর আলম চৌধুরী

রাজনৈতির মাঠে বিরোধী দল না থাকায় আওয়ামী লীগের মুখোমুখি অবস্থানে এখন আওয়ামী লীগই। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ গ্রহণ না করলে সে ক্ষেত্রে কক্সবাজার-৪ উখিয়া-টেকনাফ ভাগ্যবান আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারে। বিশেষ করে সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদি কিংবা তার স্ত্রী শাহিন আক্তার এমপি অথবা তার শ্যালক উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী মনোনয়ন না পেলে এই আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের একটি অংশ। নির্বাচনি মাঠে প্রতিপক্ষ থাকলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রতিপক্ষ মোকাবিলায় ব্যস্ত থাকতেন। এখন প্রতিপক্ষহীন নির্বাচন হওয়ায় আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগই। ইতিমধ্যেই উখিয়া-টেকনাফের ছয় আওয়ামী লীগের নেতা সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদির বিপক্ষে শক্ত অবস্থান জানান দিয়েছেন। এরই মধ্যে তারা উখিয়া-টেকনাফে শো-ডাউন করে প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন। তারা দলীয় মনোনয়ন ফরম নিতে ঢাকা রওয়ানা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। বর্তমান সংসদ সদস্য ছাড়াও অনেকেই ঢাকায় অবস্থান করছেন। এতে করে দলে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। উখিয়া-টেকনাফ আওয়ামী লীগে ত্যাগী নেতাকর্মী থাকার পরও গেল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদির স্ত্রী শাহিন আক্তারকে দল মনোনয়ন দেয়ায় ভুল প্রার্থী বাছাই হয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। এবারও যদি যোগ্য ও দলের নিবেদিত প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া না হয় সেক্ষেত্রে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। এখানকার ভোটাররা মনে করছেন, বিএনপি নির্বাচনে না থাকায় নৌকার মনোনয়ন পেলেই পাস। এ চিন্তাধারা থেকেই প্রার্থীরা জনমুখী না হয়ে মনোনয়নমুখী ও প্রশাসনমুখী হচ্ছেন। ফলে তৃণমূলে রাজনৈতিক দুর্বত্তায়ন হচ্ছে। টাকার বিনিময়ে নৌকা পাওয়ার অশুভ প্রতিযোগিতা চলছে। সব মিলিয়ে দলের মনোনয়ন না পেলে ক্ষোভে অনেক নেতাই এবার বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারেন এমনটি আভাস পাওয়া যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাঠ পর্যায়ের এক আওয়ামীলীগ নেতা বলেন, এবারে এমপি প্রার্থী পছন্দ না হলে নেতারা নৌকার বিপক্ষে প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দিতে পারেন। দিন শেষে ক্ষতি হচ্ছে লীগের, নষ্ট হচ্ছে চেইন অব কমান্ড। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে আসছে বিষয়টি।এ ব্যাপারে উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গির কবির চৌধুরী ও সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদির মোবাইলে একাধিকবার বক্তব্য নেয়ার চেষ্টা করা হলেও মোবাইল রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। একাধিক আওয়ামীলীগ নেতারা বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত আগেই নেয়া আছে। সুতরাং কেউ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে গেলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-৪ আসন। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ইতোমধ্যেই দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন ডজনখানেক  প্রার্থী। তবে উখিয়া-টেকনাফ আসনের জনগণ এবার মনে প্রাণে চাচ্ছেন একজন সৎ, মেধাবী ও ক্লিন ইমেজের (মাদক কলঙ্ক মুক্ত) যোগ্য জনপ্রতিনিধি।

মাদকসহ বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সমালোচনার শেষ নেই বদিকে নিয়ে। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এমপি হন। যদিও তার বাবা এজাহার মিয়া কোম্পানী ছিলেন টেকনাফ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং জাতীয়। পার্টির সমর্থনে তিনি টেকনাফের প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর নৌকার প্রার্থী হতে সমস্যা হয়নি বদির। তবে এমপি থাকাকালেই দুদকের একটি মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ড হয় তার। এজন্য গত নির্বাচনে বদির পরিবর্তে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন তার স্ত্রী শাহীন আক্তার। কিন্তু এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর গত পাঁচ বছরে স্থানীয় জনগণ এবং দলীয় নেতাকর্মীরাও শাহীনের দেখা পাননি।

কক্সবাজার ৪ : বর্তমান এমপি শাহিনা আক্তার এই আসনের সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির স্ত্রী। বিতর্কিত নানা ঘটনায় নাম আসার পর গত নির্বাচনে বদি ভোটে দাঁড়াননি। তার পরিবর্তে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন শাহিনা। আগামী নির্বাচনে এই আসন থেকে বদি আবার নৌকা নিয়ে প্রার্থী হতে চান। এ ছাড়াও তোড়জোড় চালাচ্ছেন টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল বশর, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর, উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী।

উখিয়া-টেকনাফ আসন থেকে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। তাদের মধ্যে উখিয়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা জাফর আলম চৌধুরী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে এই প্রতিবেদককে মোবাইলে তার অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, এবার যেন দলের সাথে সম্পৃক্ত নেই এমন অযোগ্য কাউকে চুড়ান্ত মনোনয়ন না দেন। তার পাশাপাশি যারা ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে চেয়ারম্যান হয়ে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দলের সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেছেন তাদের এবং মাদকের সাথে সম্পৃক্ত থাকার ফলে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন ও মামলায় সাজা প্রাপ্ত হয়ে আছেন এমন ব্যক্তিকেও যেন দল মনোনয়ন না দেন সেদিকে এবার খেয়াল রাখবেন বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বর্তমানে সাবেক সাংসদ বদির  ঘোর বিরোধী  অবস্থানে রয়েছে। এতো কিছুর পরও বদির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা ছাড়া  কক্সবাজার-৪ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয় হয়ে আসা অনেকটা অসম্ভব বলে মনে করছেন এখানকার ভোটাররা।

পাঠকের মতামত

রামুতে শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে মানববন্ধন

কক্সবাজারের রামুতে আর্ন্তজাতিক দাতা সংস্থা ‘ডাকভাঙ্গা বাংলাদেশ’ এর শিক্ষা প্রকল্পের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ও প্রকল্প সমন্বয়কারির ...

উখিয়ায় বনবিভাগের পাহাড় কেটে তৈরি করছে বসতভিটা

কক্সবাজারের দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জের ওয়ালাপালং বিটে রাজাপালং ইউনিয়নের উত্তরপুকুরিয়া পশ্চিমপাড়া এলাকায় বনবিভাগের সহযোগিতায় ...